উৎপাদন খরচ নিয়ে শঙ্কায় পাবনার চাষিরা

নতুন পেঁয়াজে প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম বাড়েনি

কাজী বাবলা, পাবনা : | প্রকাশিত: ১২ মার্চ ২০২৫ |   
ছবিটি পাবনার আতাইকুলার পুষ্পপারা হাট থেকে তোলা।- ঢাকা রিপোর্ট

গত বছর পেঁয়াজের দর বেশি থাকলেও এ বছরের চিত্র ভিন্ন। নতুন পেঁয়াজ বাজারে এলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়েনি চাহিদা। ফলে দাম কমে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ উঠবে কি না শঙ্কায় পাবনার পেঁয়াজ চাষিরা। দেশের সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয় পাবনা অঞ্চলে। পাইকারি বাজারে সরবরাহ বেড়লে পেঁয়াজের দর প্রতিদিনই আশঙ্কাজনক হারে কমছে। গত বছরের তুলনায় এবার পেঁয়াজ আবাদ বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। গত বছর প্রত্যাশার চেয়ে বেশি লাভ হওয়ায় অনেক কৃষক ঋণ নিয়ে এবার বেশি আবাদ করেছেন।

পাবনার আতাইকুলার পুষ্পপারা পাইকারি হাটের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, গত সোমবার হাটে নতুন পেঁয়াজ এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। আর বৃহস্পতিবারের হাটে এক মণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকা দরে। স্থানীয় পাইকারি বাজারে প্রতিদিনই সরবরাহ বাড়ছে, কিন্তু চাহিদা না বাড়ায় দাম পড়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানান। ব্যবসায়ীরা জানান, গত সোমবার হাটে ৮০ থেকে ১০০ মণ পেঁয়াজের আমদানি হয়েছিল, আর বৃহস্পতিবারের হাটে পেঁয়াজ  আমদানি হয় দ্বিগুণ।

সুজানগর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের কৃষক মো. কামরুজ্জামান বলেন, এ বছর প্রায় ৮০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছেন। এর মধ্যে ৩০ বিঘা জমি লিজ নিয়েছেন। নিজের জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করতে প্রতি বিঘায় তার প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা ব্যয় হয়, আর লিজ নেওয়া জমিতে ব্যয় হয়েছে অর্ধ লক্ষাধিক টাকা। 'গড়ে এক কেজি পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ টাকা। তিনি আরো জানান, গত বছর শুরুতেই এক মন পেঁয়াজ আড়ই থেকে তিন হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। বছর জুড়েই বাজার ভালো ছিল। গত বছরের তুলনায় এবার নতুন পেঁয়াজের দাম অর্ধেকেরও কম।

কৃষক মফিকুল ইসলাম বলেন, গত বছর পেঁয়াজ আবাদ করে এক লাখ টাকা লাভ হলেও এবার পেঁয়াজের দাম এতই কম যে উৎপাদন খরচও তোলা সম্ভব না। আরেক কৃষক মশিউর রহমান বলেন, এ বছর কমপক্ষে দুই হাজার ২০০ টাকা মণ দরে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারলে লাভের টাকা ঘরে আসবে। গত বছর প্রত্যাশার বেশি লাভ হওয়ায় অনেক কৃষক ঋণ নিয়ে বেশি আবাদ করেছেন।

পাবনার সুজানগর উপজেলার উলাট গ্রামের কৃষক মন্টু খান জানান, নিজের মালিকানাধীন প্রায় ১০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে তার খরচ হয়েছে প্রায় দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর মধ্যে তিনি ঋণ নিয়েছেন প্রায় দেড় লাখ টাকা। পেঁয়াজ বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করব ভেবেছিলাম, পেঁয়াজ এখন গলার কাঁটা হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারি বাজারগুলোতে এখনো স্থানীয় পেঁয়াজের চাহিদা নেই।

পাইকারি ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, প্রতি হাটে ১০ থেকে ১২ ট্রাক পেঁয়াজ ঢাকা, টাঙ্গাইল, গাজীপুরসহ আশেপাশের জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম আর সিলেটের মোকামগুলো পেঁয়াজ নিলে দিগুণের বেশি সরবরাহ হতো।

পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশিকুর রহমান বলেন, এ বছর এক কেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৩৮ টাকা। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুসারে গত বছরের তুলনায় এবার পেঁয়াজ আবাদ বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। গত বছর দেশে দুই লাখ ৯৩ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হলেও এবার তিন লাখ হেক্টর ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে এ বছর পাবনায় ৫৩ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। প্রায় আট লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদনের আশা করছে কৃষি বিভাগ।

পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. রোকনুজ্জামান বলেন, দাম কমলেও কৃষকদের হতাশ হওয়ার কারণ নেই। এখন পুরোদমে পেঁয়াজ তোলা হচ্ছে জন্য বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। তাড়াহুড়ো করে পেঁয়াজ বিক্রি না করে সংরক্ষণ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, মৌসুম শেষে পেঁয়াজের দাম বাড়বে।


মন্তব্য লিখুন :