সরকারের আদেশ উপেক্ষা করে বিদেশে আশ্রয়ের প্রচেষ্টায় বহু কূটনীতিক

ঢাকা রিপোর্ট প্রতিবেদক : | প্রকাশিত: ২৫ মার্চ ২০২৫ |   

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আদেশ অমান্য করে বাংলাদেশের অনেক দূতাবাসের কূটনীতিকই দেশে ফিরছেন না। বরং তারা বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর এখন পর্যন্ত প্রায় ২২ কূটনীতিককে নিজ নিজ মিশন থেকে ঢাকায় সদর দপ্তরে ফিরতে বলা হয়। রাষ্ট্রদূত-উপ-রাষ্ট্রদূত, কাউন্সেলর ও সচিব পদে নিযুক্ত অনেক কূটনীতিককে অবস্থানরত মিশন থেকে বদলি করে অন্য দেশে যোগদানের নোটিশ দেয়া হয়। পাশাপাশি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত অন্তত ১৪ কূটনীতিকের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বিভিন্ন দূতাবাসে ও হাইকমিশনে থাকা রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের নিয়োগ বাতিল এবং রদবদলের উদ্যোগ নেয়। সেজন্য গত বছরের আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের দেশে ফিরে আসার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু তলবের প্রায় ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো দেশে ফেরেননি অনেক কূটনীতিক। বরং তাদের অনেকে  বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানা যায়।

সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জাপান, জার্মানি, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতদের চুক্তি অন্তর্বর্তী সরকার গত বছরের ১৪ আগস্ট বাতিল করে। তখন মালদ্বীপে প্রেষণে নিযুক্ত হাইকমিশনারকেও দেশে ফিরে আসার নির্দেশ দেয়া হয়। গত সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ঢাকায় ফিরে আসতে বলা হয়। তারপর অক্টোবরে ভারত, নিউইয়র্কে স্থায়ী মিশন, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগালে দায়িত্ব পালনরত পাঁচ রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারকেও ঢাকায় ফেরার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু নির্দেশনা মেনে এখনো দেশে ফেরেননি অনেকেই। বরং সৌদি আরবে নিয়োজিত রাষ্ট্রদূতকে দেশে ফেরার নির্দেশ দেয়ার পর তিনি দেশে না ফিরে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। একইভাবে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনারও সরকারের নির্দেশনা মেনে দেশে ফেরেননি। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত এক কূটনীতিক দেশে না ফিরে রাজনৈতিক আশ্রয়ে কানাডায় অবস্থান করছেন। তাছাড়া কলকাতা ডেপুটি মিশনের প্রথম সচিবও দেশে না ফিরে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন যুক্তরাজ্যে। আর মরক্কোয় নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূতকে দেশে ফেরার নির্দেশ দেয়ার পর তা না মেনে তিনি কানাডায় চলে গেছেন। সরকার তার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করেছে। একইভাবে রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের কনসুলার তার পরিবারের সদস্যদের কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। জাপানের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও তার পরিবারের সদস্যদেরও কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। তারা সপরিবারে বিদেশে রয়েছেন এবং দেশে ফিরতে নারাজ।

সূত্র আরো জানায়, মূলত বর্তমান যেসব কূটনীতিকের চুক্তি বাতিল করেছে তাদের অনেকেই দেশে ফেরেননি। তাদের বেশিরভাগই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত এবং পররাষ্ট্র ক্যাডারের বাইরের কর্মকর্তা। আর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তদের চুক্তি বাতিল হওয়ায় তাদের দেশে ফেরা-না ফেরার নিয়ে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। তাদের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের আর কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের দেশে ফিরে আসা বা না আসায় কিছুই যায়-আসে না। তবে ফরেন ক্যাডারের কোনো কর্মকর্তা যদি মন্ত্রণালয়ের আদেশ না মানে তাহলে তাদের নিয়ে মন্ত্রণালয় ভাববে।

এদিকে সরকারের আদেশ অমান্য করে দেশে না ফেরা কূটনীতিকদের অনেকের মতে, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের বিধান না থাকায় বর্তমান সরকারের কোনো আদেশ তারা মানতে রাজি নন। এ সরকারের অধীনে কাজ চালিয়ে নিতে তারা দেশে ফিরবেন না। কারণ দেশে গেলেই নানাভাবে হয়রানি করা হবে এবং জীবনের ঝুঁকি রয়েছে।

অন্যদিকে সরকারের তলবে দেশে ফেরা কর্মকর্তাদের অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়েছেন। তাদের মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগে পরিচালক কিংবা অন্য পদে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।


মন্তব্য লিখুন :